বাঙালিদের বারো মাসে তেরো পার্বণের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হল জামাইষষ্ঠী। প্রতিবছর জৈষ্ঠ মাসে শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে বাঙালির প্রত্যেক ঘরে ঘরে এই উৎসব পালিত হয়। শাশুড়ি মায়েরা জামাই এর মঙ্গল কামনায় মূলত এই ব্রত পালন করে।
জামাইষষ্ঠীর দিন প্রত্যেক ঘরের মায়েরা দেবী ষষ্ঠীকে খুশি করতে ষষ্ঠী পুজো করেন এবং ওই দিন মেয়ে ,জামাইকে ঘরে এনে জামাই আদর যত্ন করেন ও জামাইয়ের কপালে মঙ্গল টিপ দেয় ও মাথায় ধান, দূর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করেন। এছাড়া দুপুরে জামাই ভোজনের বিশাল আয়োজন থাকে।
জৈষ্ঠ মরশুমি ফল (আম, লিচু, কাঁঠাল প্রভৃতি) থেকে শুরু করে মাছ, মাংস, দই, মিষ্টি কোন কিছু পড়তে বাকি থাকে না জামাইয়ের পাতে। এবং এই দিন শাশুড়ি জামাই একে অপরকে নতুন বস্ত্র উপহার দেয়।
তবে জামাইষষ্ঠীর নিয়ম, দিনক্ষণ সকলে জানলেও এই জামাইষষ্ঠী কবে থেকে চালু হয়েছে বা জামাইষষ্ঠীর পেছনে থাকা ইতিহাস অনেকেই জানেন না
জামাইষষ্ঠী চালু হওয়ার ইতিহাসে প্রচলিত দুটি সংস্কার এর কথা জানা যায়।
বছরের এই একটা দিন নাকি মেয়ের মুখ দেখতো বাবা মা। অনেকের মতে শোনা যায় বিবাহিত কন্যা যতদিন পর্যন্ত পুত্র সন্তানের জন্ম দিচ্ছে ততদিন বাবা-মা তার গৃহে পা রাখবেন না। সেই কারণে কন্যার মুখ দর্শন করতে বা একবার দেখবার জন্য বছরের এই একটা দিন বাবা মার গৃহে মেয়ে ও জামাইকে নিমন্ত্রণ করা হত। এই দিনটি জামাইষষ্ঠী নামে প্রচলিত।
এছাড়াও আরও একটি প্রবাদ কথিত আছে, একটি পরিবারের একজন গৃহবধূ ছিল খুব লোভী। সে সব সময় বাড়ির ভালো খাবার গুলো লুকিয়ে খেতো এবং তার দোষ চাপাতো বেড়ালের ওপর। বেড়াল হল দেবী ষষ্ঠীর বাহন। বেড়ালের প্রতি সব সময় এই অভিযোগ শুনে দেবী ষষ্ঠী ক্ষুব্ধ হয় এবং ওই বউর শাস্তি স্বরূপ তার সন্তান কেড়ে নেয়। ফলে সন্তানের শোকে তার অবস্থা হয় পাগলের মতো। এরপর স্বয়ং দেবী নিজে একদিন বৃদ্ধার রূপ নিয়ে ওই গৃহবধুর কাছে এসে তার আচরণের কথা মনে করিয়ে দেয়। ফলে ওই গৃহবধূ তার ভুল বুঝতে পারে ও বৃদ্ধার (মা ষষ্ঠী) কাছে দয়া ভিক্ষা করে। তখন দেবীর ষষ্ঠী তাকে বলেন সন্তান ফিরে পেতে চাইলে তাকে জৈষ্ঠ মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে ষষ্ঠী পুজো করতে হবে। তবে থেকে এই ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে জামাইষষ্ঠী উৎসবটি পালন করা হয়